সুস্বাস্থ্য জীবন যাপনের জন্য শারীরিক ব্যায়াম এর কোন বিকল্পই নেই। আর বিশ্বের সবচেয়ে সহজ ও অন্যতম একটি শারীরিক ব্যায়াম হচ্ছে হাঁটা। হাঁটা এমন একটি শারীরিক ক্রিয়া যা সব বয়সের মানুষের জন্য সক্ষম। এমন কি ডাক্তারগণও ব্যায়াম হিসেবে প্রথম হাঁটার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
আর হাঁটার সব থেকে ভালো সময় হচ্ছে সকাল বেলা।
সকালে হাঁটার উপকারিতা
নিয়মিত সকালের হাঁটার বিভিন্ন উপকারিতা রয়েছে যার মধ্যে থেকে ৮টি উপকারিতা এই পোস্টে তুলে ধরা হলো।
তাই আর দেরি না করে চলেন জেনে নিয়ে নিয়মিত হাঁটার উপকারিতাগুলো সম্পর্কে।
১. ডায়াবেটিসের ঝুঁকি এড়াতে
আমরা সবাই মোটামুটি ডায়াবেটিস রোগের সাথে পরিচিত কেননা বর্তমান সময়ে এটি একটি অন্যতম প্রাধান্যপূর্ণ বা কর্তৃত্বকর রোগ। তবে আমরা চাইলেই এই রোগটি থেকে বিরত এবং এটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি।
এক গবেষণা থেকে জানা যায় যে নিয়মিত ৩০ মিনিট হাঁটার ফলে ব্লড সুগার নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি টাইপ-২ ডায়াবেটিসের সাহায্য করে অর্থাৎ হাঁটার ফলে ব্লড সুগার স্তরের উন্নতির সাথে সাথে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হ্রাস হয়।
এতে করে আমাদের শরীরের ক্ষমতা আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পায় ফলে আমরা ইনসুলিন থেকে মুক্তি হতে পারি। তাই ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীর ডায়াবেটিস হ্রাস ও নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য হাঁটা অপরিসীম।
২. মাংসপেশি ও জয়েন্টর ব্যথা কম করে
আমরা আরাম প্রিয় মানুষ সকালে ঘুম থেকে ওঠা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে আর যাদের মাংসপেশি ও জয়েন্টে সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য আরও কষ্টকর হয়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে দেখা যায় আমাদের বিভিন্ন হাড়ের সংযোগস্থলে ব্যথার সৃষ্টি হতে থেকে আর বিশেষ করে মহিলারা এই সমস্যায় ভোগে।
তবে হাঁটার ফলে এ থেকে আরাম পাওয়া যায়। সকালের একটি চটপটে হাঁটা আমাদের জয়েন্টের চারপাশের মাংসপেশিকে তৈলাক্ত এবং দৃঢ়তা দ্বারা জয়েন্টকে রক্ষা করতে সহায়তা করে।
তাই যাদের এই সমস্যা আছে তাদের জন্য নিসন্দেহে হাঁটা একটি কার্যকর ব্যায়াম এমনকি ডাক্তারগণও তাদের নিয়মিত হাঁটার পরামর্শ দেন।
Read More
- ডিপ্রেশন কী? ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়
পেটের মেদ কমানোর ৮টি কার্যকর উপায় | Belly Fat Reduce Effectively
৩. মানসিক মেজাজ উন্নত করা
সকালের প্রকৃতি এমনিতেই থাকে স্নিগ্ধ যা দেখলে মন ও শরীর সতেজ হয়ে যায়। আর এরকম সময় হাঁটার ফলে মানুষের মানসিক কর্মকান্ডের জন্য উপকারী হয়। যেমন-
- মানসিক চাপ দূর হয়ে যায়।
- দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পায়।
- ক্লান্তি-অবসাদ দূর হয়।
- ডিপ্রেশনে থাকে না।
আর এজন্যই আমাদের নিয়মিত সকালে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট হাঁটার চেষ্টা করতে হবে।
৪. ওজন কমাতে করতে সাহায্য করে
ওজন কমাতে আমরা বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ব্যায়াম করে থাকি যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে হাঁটা। হাঁটাহাটির আমাদের ওজন কমানোর লক্ষ্যকে বাস্তবায়ন করতে সাহায্য করে।নিয়মিত হাঁটা মাধ্যমে আমরা আমাদের ওজন কমাতে পারি।
ওজন কমাতে হলে আমাদেরকে শরীর থেকে প্রতিদিন ৫০০ ক্যালোরি ঝরিয়ে ফেলতে হবে আর সকালে ৩০মিনিট বা ১ঘন্টা হাঁটার মাধ্যমে আমরা সুন্দরভাবে ৩০০ ক্যালোরি ঝরিয়ে ফেলতে পারব।
তবে এই হাঁটা স্বাভাবিক গতি থেকে একটু বেশি গতিময় হবে। একজন হেলথি স্পেশালিস্ট ও ওজন কমানোর জন্য হাঁটার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। একটি হেলদি ডায়েট ও নিয়মিত সকালে হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলার মাধ্যমে আমরা অতি সহজেই ওজন কমাতে পারি।
Read More:
৫. ঘুমতে সাহায্য করে
আমাদের মধ্যে অনেকেরই রাতের বেলা ঘুম ভালো হয় না। সকালে হাঁটার ফলে মন ও শরীর সক্রিয় থাকে এবং সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠার কারণে রাতে ভালো ঘুম হয়। তাই আমাদের সকালে হাঁটার অভ্যাস করতে হবে।
৬. ফুসফুসের ধারকত্ব বৃদ্ধি করে
সকালের আবহাওয়া খুবই মনমুগ্ধকর থাকে যার ফলে মন সতেজ এর পাশাপাশি হাঁটতেও ভালো লাগে।সকালে হাঁটার আরেকটি উপকারিতা রয়েছে আমাদের হাঁটার স্পিডের ওপর নির্ভর করে ফুসফুসে অধিক অক্সিজেন সরবরাহ করতে সকালের হাঁটা সাহায্য করে।
আমরা যখন হাঁটি তখন আমাদের মাংসপেশি ও টিস্যুর প্রয়োজনীয় উৎসেচক প্রতিক্রিয়া বহন করতে উচ্চ লেভেলের অক্সিজেন দরকার হয়। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ফুসফুসের ধারকত্ব বৃদ্ধি পায়। আর যেহেতু সকালে হাঁটা দ্বারা আমরা অধিক অক্সিজেন নিতে পারি সেহেতু সকালের হাঁটা ফুসফুসের ধারকত্ব বৃদ্ধির জন্য উপকারী।
৭. মস্তিষ্ক ক্রিয়াকলাপ বা ফাংশনের উন্নতি করে
নিয়মিত হাঁটার ফলে আমাদের মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপ বা ফাংশনের উন্নতি সাধন হয়।
হাঁটার কারণে আমাদের দেহে রক্ত চলাচল ও অক্সিজেনর উন্নতি হয় আর এতে করে মস্তিষ্কের মাত্রা বৃদ্ধি হয় অর্থাৎ মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপ বা ফাংশনের উন্নতি হয়। আর এতে করে সম্ভাব্য মানসিক সমস্যা যেমন- কোনো কিছু মনে না থাকা বা স্মৃতিহীনতা প্রাপ্তি, বুদ্ধিবৈকল্য ইত্যাদি থেকে প্রতিরোধ পাওয়া যায়।
৮. হৃদপিণ্ড মজনুত বা স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাস
হৃদপিন্ডের সাথে সম্পর্কযুক্ত একটি প্রধান শব্দ হচ্ছে রক্ত চলাচল। সকালে হাঁটার ফলে আমাদের রক্ত চলাচল সঠিকভাবে হতে সহায়তা করে, হৃদরোগের ঝুঁকি কমার পাশাপাশি উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আর যার ফলে আমরা একটি সুপরিচিত রোগ স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে যায়।
Conclusion:
University of South Carolina এর একটি গবেষণা থেকে জানা যায় যে– “সপ্তাহে ৫ দিন নিয়মিত ১ ঘন্টা যাবত হাঁটলে স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাস হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।”
তাই সুস্থ্য ও শক্তিশালী হৃদয়ের জন্য এবং স্ট্রোক থেকে বাঁচার জন্য আমাদেরকে নিয়মিত হাঁটার চেষ্টা করতে হবে।
এছাড়া সকালে হাঁটার মাধ্যমে আমরা আমাদের শরীরে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি কমাতে পারি কেননা সকালের সূর্যের ভিটামিন ডি থাকে যা আমাদের জন্য খুবই উপকারী।
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা সকালে নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করেন তারা অবশ্যই এই সকল উপকারীতার সাথে পরিচিত। আর যারা এখনো এ সকল উপকারিতা সম্পর্কে জানেন না আশা করি এই পোষ্টের মাধ্যমে জেনে গেছেন সকাল হাঁটার উপকারীতা সম্পর্কে। তাই আর দেরি না করে সুস্বাস্থ্যবান জীবনযাপনের জন্য আজ থেকেই নিয়মিত সকালে হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলুন।