বর্তমান সময়ে অধিক মানুষের মধ্যে একটি সমস্যার সমন্বয় দেখা যায় আর তা হলো অধিকতর চর্বি জনিত সমস্যা। আর এই সমস্যা সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে আমাদের পেটে অর্থাৎ বেশিরভাগ মানুষই অত্যাধিক পরিমাণে পেটে চর্বি সমস্যায় ভুগছেন।
কিন্তু ভয়ানক ব্যাপার হল তাদের অনেকেই এটাকে গুরুত্বের সাথে দেখে না এবং এটা নিয়ে তারা ন্যূনতম চিন্তাও করে না।
পেটের অতিরিক্ত চর্বি বা মেদ যেমন একজন ব্যক্তির সৌন্দর্যকে নষ্ট করে দেয় ঠিক তেমনি ভাবে এটি বিভিন্ন রোগের কারণ হয়ে দাঁড়া। কথাটি অবাক জনক হলেও এটাই সত্য।
এখন সবারই মনে প্রশ্ন উঠতে পারে যে তাহলে কিভাবে পেটের মেদ কমানো যায়?
পেটের মেদ কমানোর বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি রয়েছে। যার মধ্যে একটি জনপ্রিয় হচ্ছে খাবার না খাওয়া বা কম খাওয়া অর্থাৎ ডায়েট। তবে অনেকে অতিরিক্ত ডায়েট করতে গিয়ে ফলাফল বিপরীত পান এবং স্বাস্থ্যর ঝুঁকি বাড়ায়। তাই আমাদের উচিত সঠিক এবং আমাদের নিজের শরীরের সাথে মানানসই পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
আজকের আমাদের এই পোষ্টের মাধ্যমে আমরা জেনে নিব কিভাবে পেটের চর্বি কমানো যায় তার সঠিক ও সহজ ৮টি কার্যকর উপায় যা ফিটনেস ট্রেইনার ও বিশেষজ্ঞগণ কর্তৃক পরামর্শ নেওয়া।
পেটের অতিরিক্ত মেদের কারণ
পেটের মেদ কমানোর পূর্বে পেটের মেদ বা চর্বি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ খুঁজে বের করতে হবে। কেননা সমস্যা সমাধানের পূর্বে সমস্যা বের করায় হচ্ছে কঠিন কাজ।
পেটের মেদ বাড়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে যা এক এক ব্যক্তির জন্য এক এক রকমের হয়ে থাকে। যদি আমরা সেই কারণ বের করতে পারি তাহলে অতি সহজেই আমরা তা সমাধান করতে সক্ষম হব। তাই আমাদের কে আগে মেদ বাড়ার কারণগুলো জেনে নিতে হবে আর সেক্ষেত্রে সর্বপ্রথম কারণ হচ্ছে –
১. অস্বাস্থ্যকর খাবার
বর্তমান সময়ে একটি লোভজনক এবং অতি পছন্দের খাবার হচ্ছে জাঙ্ক ফুড। আর মেদ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এটির বড় হাত রয়েছে। এখনকার মানুষ এসব ফাস্টফুড, ভাজাপোড়া এবং মিষ্টিজাতীয় খাবারের উপর আসক্ত হয়ে গেছে যার ফলে তার তা অধিক মাত্রায় গ্রহণ করে। আর এসব খাদ্য আমাদের শরীরের ক্যালরির মাত্রা বৃদ্ধি করে দেই যার ফলস্বরূপ পেটের মেদ বেড়ে যায়।
২. দুঃশ্চিন্তা
আমাদের সবার মাঝেই একটি রোগ বিরাজ করে আর তা হচ্ছে দুঃশ্চিন্তা। এখন এমন কোনো মানুষ নেই যে কোনো বিষয় নিয়ে দুঃশ্চিন্তা ছাড়া আছে।
এখন সবারই মনে প্রশ্ন উঠতে পারে যে দুঃশ্চিন্তার সাথে পেটের মেদের কি সম্পর্ক রয়েছে?
সম্পর্ক আছে যখন কোনো ব্যক্তি ডিপ্রেশন বা দুঃশ্চিন্তা করে তখন আমাদের দেহের অ্যাড্রিনাল(Adrenaline)নামক গ্রন্থি এক ধরনের হরমোন তৈরি করে যা আবার আমাদের যকৃত থেকে চিনি নিঃসরণ করে থাকে এতে মেদ বেড়ে যায়।
Read More
৩. শারিরীক পরিশ্রম না করা
এখন আমরা এমন এক যুগে চলে এসেছি যাকে যান্ত্রিক যুগ বলা যায়। কেননা এখন প্রায় সবকিছুই যন্ত্র বা টেকনোলজির মাধ্যমে করে ফেলা যায়। এতে করে যেমন আমাদের অনেক সুবিধা হয়েছে ঠিক তেমনি ভাবে আমাদের মাঝে অলসতা চলে এসেছে। ফলে মানুষ দিন দিন অবসাদগ্রস্ত হয়ে যাচ্ছে।
এখন আর আগের মতন মানুষকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়ার জন্য হাঁটতে হয় না বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের মাধ্যমে কোনো পরিশ্রম ছাড়াই চলে যায়।
কোনো কিছুর জন্য মানুষকে এখন ঘরের বাইরেও যেতে হয় না ঘরে বসে সবকিছু পাওয়া যায়। ফলে মানুষের পরিশ্রম কমে গিয়েছে। এমন কি এখন আর সিঁড়ি ব্যবহার করতে হয় না এর পরিবর্তে লিফটের ব্যবস্থা চলে এসেছে।
আর যার ফলে আমাদের শারিরীক পরিশ্রম খুব কম হয় এবং ক্যালরি জমে থাকে যা মেদ বাড়াতে সাহায্য করে।
৪. অনিয়মিত ঘুম
আমাদের সবারই বিভিন্ন অভ্যাস থাকে যার মধ্যে একটি হচ্ছে অনিয়মিত ঘুম। আমরা বিভিন্ন কারণে সঠিক সময় না ঘুমিয়ে রাত জেগে থাকি। ফলে আমাদের দেহে স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি পরিমাণের ক্যালোরি খরচ হয়ে থাকে।
তাই যখন আমরা খাবার গ্রহণ করি তখন খাবারের গ্রহণের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং একসাথে অনেক খাবার গ্রহন করলে তা মেদ বৃদ্ধির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
পেটের মেদ কমানোর সহজ ও কার্যকর ৮টি উপায়
কোন কাজই কঠিন নয় যদি তা আপনি মন থেকে করেন ঠিক তেমনি পেটের মেদ কমানোও কোন কঠিন কাজ নয়। পেটের মেদ কমানোর ক্ষেত্রে আপনাকে শুধু কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে।
১. স্বাস্থ্যকর খাবার
পেটের মেদ কমানোর জন্য আমাদেরকে সর্বপ্রথম যা করতে হবে তা হচ্ছে একটি সঠিক খাদ্য তালিকা বাছাই করা।আমাদের প্রতিদিনের খাবার হতে হবে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার।
ওটস হতে পারে একটি স্বাস্থ্যসম্মত খাবার যা আপনি আপনার সকালের নাস্তায় রাখতে পারেন। এছাড়া দুধ(ফ্যাট ফ্রি হতে হবে),ডিম ইত্যাদিও সকালের নাস্তায় রাখতে পারেন।
যদি কেউ এসব খাদ্য না খেতে পারে সে ক্ষেত্রে তারা লাল চালের ভাত, লাল গমের রুটি ইত্যাদি গ্রহণ করতে পারে এগুলো পেটের মেদ কমানোর ক্ষেত্রে বেশ কার্যকর।
এছাড়া আপনি আপনার খাদ্য তালিকায় অবশ্যই ফলমূল ও শাকসবজি রাখবেন এগুলো আপনার শরীরে ভিটামিনের ঘাটতি হতে দিবে না। একটা কথা মাথায় রাখবেন খাবার তৈরির সময় কম তেল ও মসলা ব্যবহার করবেন। পারলে ওলিভ তেল ব্যবহার করবেন এটিতে ফ্যাটের পরিমাণ কম।
২. যেসব খাবার এড়িয়ে চলবেন
আমরা যেমন খাদ্য তালিকায় স্বাস্থ্যকর খাবার যোগ দিয়েছি ঠিক তেমনি ভাবে আমাদেরকে খাদ্য তালিকা থেকে কিছু খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার এগুলো থেকে আমরা যত সম্ভব দূরে থাকার চেষ্টা করব।
- মেদ কমানোর জন্য আমাদেরকে জাঙ্কফুড এড়িয়ে চলতে হবে।
- ডিপ ফ্রাই বা অতিরিক্ত পরিমাণ তেলযুক্ত ও মসলাযুক্ত খাবার আমাদেরকে গ্রহণ হতে দূরে থাকতে হবে।
- রান্নায় অতিরিক্ত লবণ বা আলাদা লবণ খাওয়া পরিহার করতে হবে।
৩. পানি পান করা
পেটের মেদ কমানোর জন্য একটি সহজ ও চমৎকার উপায় হচ্ছে বেশি পরিমাণে পানি পান করা। পানির অপর নাম জীবন। পানি গ্রহণের মাধ্যমে আমাদের চর্বি কমাতে সাহায্য করে। এটি আমাদের দেহের বিপাক প্রক্রিয়া বাড়িয়ে দেয় যার ফলে চর্বি কমাতে সাহায্য হয়।
তাই আমাদেরকে প্রচুর পরিমাণে পানি গ্রহণ করতে হবে কমপক্ষে দিনে দু লিটার পানি গ্রহণ করা উচিত। কিন্তু পানি হিসাবে কোন ধরনের সফট ড্রিংকস পান করা যাবে না তা মেদ কমানোর বদলে বাড়াতে সাহায্য করে। তবে ঘরোয়া ফলের জুস খাওয়া যেতে পারে চিনিবিহীন।
৪.মিষ্টি জাতীয় খাবার
আমাদের কি মিষ্টি জাতীয় খাবার হবে যেমন– চকলেট, আইসক্রিম ও বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি ইত্যাদি বাদ দিয়ে দিতে হবে। এগুলো আমাদের শরীরে গ্লুকোজের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় যার ফলে আমাদের শরীরে ফ্যাটের সৃষ্টি হয় এবং মেদ বাড়ে।
৫. প্রোটিন জাতীয় খাবার
প্রোটিন জাতীয় খাবার আমাদের দেহে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। আমরা অনেকেই আছে যারা এটা ভাবে থাকি যত কম খাব ওজন তত তাড়াতাড়ি কমবে কিন্তু এটি সম্পূর্ণ একটি ভুল ধারণা। যদি হঠাৎ করে খাবার কমিয়ে দেয় তাহলে আমাদের শরীর অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
তাই আমাদের খাদ্য তালিকায় প্রোটিন জাতীয় খাবার রাখতে হবে। প্রোটিন জাতীয় খাবার যেমন– দুধ, ডিম, মাছ, মাংস, ডাল ইত্যাদি খাদ্য আমাদেরকে অনেক সময় ধরে শক্তি দেয়। যার ফলে আমাদের বেশি খাবার খেতে হয় না এবং মেদ কমাতে সহায়তা হয়।
৬. ঘুম
সবাই মনে করে যত কম ঘুমবে ওজন ততই কম বাড়বে কিন্তু এটি আমাদের ভুল ধারণা। ঘুম যদি কম হয় তাহলে আমাদের দেহে ক্ষিদের পরিমাণ বেড়ে যায় ফলে আমরা বেশি খাবার গ্রহণ করি।
আমাদের কে নিয়মিত ঘুমানোর অভ্যাস করতে হবে। রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমাইতে হবে এবং সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতে হবে। প্রতিদিন ঘুম কমপক্ষে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে।
আর আমরা খাওয়ার সাথে সাথে ঘুমাবো না খাওয়ার ৪০ মিনিট পর ঘুমাবো তাহলে আমাদের মেদ বাড়বে না।
৭. পেটের মেদ কমানোর ঘরোয়া উপায়
পেটের মেদ কমানোর জন্য আমরা যেমন কিছু অভ্যাস ছেড়ে দিয়েছে তেমনি কিছু অভ্যাস আমাদেরকে আমাদের খাদ্য তালিকায় যুক্ত করতে হবে।যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে–
- লেবুর পানি
সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে এক গ্লাস লেবুর জল খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।এক গ্লাস গরম পানিতে লেবুর রস ও এক চামচ মধু মিশিয়ে নিন।এই ঘরোয়ারেনিটিডিন পেটের মেদ কমাতে দারুণভাবে কাজ করে।
- আদা পানি
আদা এমন একটি শষ্যদানা যা মেদ কমাতে দারুণভাবে কাজ করে। তাই আমরা আদা পানি খাওয়ার অভ্যাস করতে পারি এক গ্লাস গরম পানিতে কয়েকটি আদার টুকরা মিশিয়া তার পানি পান করা যায়। এটিও মেদ কমাতে সাহায্য করে।
- গ্রিন টি
বর্তমানে গ্রিন টি চিনে না এমন মানুষ খুব কমই আছে। এটি মেদ কমাতে অন্যতম জনপ্রিয় একটি পানীয়। এটির মাধ্যমে অতি সহজেই আমাদের দেহের মেদ কমাতে সাহায্য করে। আমরা প্রতিদিন সকাল ও রাতে ঘুমানোর আগে গ্রিন টি পান করার অভ্যাস করব। গ্রিন টি আমাদের পেটের মেদ কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে।
- কফির পানি
কফির পানি শুনতে অবাক লাগলেও বর্তমানে এটি একটি জনপ্রিয় ঘরোয়া রেমিডি। এটি ওজন কমাতে দারুন ভাবে কাজ করছে। গরম পানির সাথে দুই চামচ কফি পাউডার ও লেবুর রস মিশিয়ে পান করুন। ওজন কমাতে এটি যাদুর মতো কাজ করবে।
৮. ব্যায়াম
পেটের মেদ কমানোর জন্য স্বাস্থ্যকট খাবার পাশাপাশি আমাদেরকে প্রতিদিন নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। পেটের মেদ দ্রুত কমাতে ব্যায়াম এর কোন বিকল্প নেই।
তাই উপরোক্ত অভ্যাস গুলোর পাশাপাশি আমাদেরকে কিছু ব্যায়ামও করতে হবে।নিচে পেটের মেদ কমানোর কিছু বিশেষ ব্যায়ামর কথা বলা হল–
- লেগ রেইস
- ক্রঞ্চেস
- সিট-আপ
- জাম্প স্কোয়াটস
- হাই নেইস
- জাম্পিং জ্যাক
- প্লাংক
ইত্যাদি ব্যায়ামগুলো ১০ বার করে দুই সেট পূর্ণ করতে হবে। প্রতিদিন ব্যায়াম করার মাধ্যমে অতি সহজে পেটের মেদ কমে যাবে।
উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা জেনে নিলাম কিভাবে অতি সহজেই আমরা পেটের মেদ কমাতে পারি এবং একটি সুস্থ জীবন কাটাতে পারব। তাই আর দেরি না করে আজ থেকেই কাজে লেগে পড়ুন। আর অবশ্যই নিয়মিত উক্ত বিষয়গুলো অনুসরণ করবেন তাহলে আপনি নিশ্চয়ই ফলাফল পাবেন।।মনে রাখবেন অনুশীলন একটি মানুষকে নিখুঁত করে তোলে।